বাংলাদেশে তার প্রতিবেশী ভারত সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই একটি কথা প্রচলিত আছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ভারত “তাদের সমস্ত ডিম এক ঝুড়িতে রেখে চলেছে”, যা আওয়ামী লীগের সাথে তাদের একচেটিয়া সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে। এটিও ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে বিভিন্ন কারণে দেশটির অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে ভারত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দিল্লির কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা যুক্তি দেন যে বিএনপির শাসনামলের অতীত অভিজ্ঞতা ভারতের পক্ষে অনুকূল ছিল না, যার ফলে দুই দলের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বিপরীতে, বিএনপি দাবি করে যে তারা বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল পররাষ্ট্র নীতির বিরোধিতা করে এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পক্ষে, যুক্তি দেয় যে এই অবস্থানকে ভারতবিরোধী হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।
এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও, এটি লক্ষণীয় যে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যখন বিজেপি প্রথম ভারতে ক্ষমতায় আসে, তখন বিএনপি শীতল সম্পর্ক গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। তারা সম্ভবত বিশ্বাস করেছিল যে যেহেতু আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেস দলের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, তাই আওয়ামী লীগের শাসনের অবসানের পর ডানপন্থী বিজেপি এবং বিএনপির মধ্যে একটি নতুন গতিশীলতা দেখা দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে, দিল্লি থেকে কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেও, শেষ পর্যন্ত, সেই সম্পর্ক প্রত্যাশা অনুযায়ী সমৃদ্ধ হয়নি।
বিপরীতে, নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দ্রুত দৃঢ় হয়েছে, যা তাদের নিজ নিজ সরকারের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উন্নত করেছে। তদুপরি, বাংলাদেশে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের অটল সমর্থন দিল্লির প্রতি বিএনপির সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল, তা নিঃসন্দেহে বিএনপি এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। দিল্লির রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে বিএনপি যদি নির্দিষ্ট ভারতীয় অনুরোধ বা স্বার্থের প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দেয়, তাহলে আরও গঠনমূলক সম্পর্কের পথ তৈরি হতে পারে।